চট্টগ্রাম দেশে ভ্রমণ

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে

মেরিনা সুলতানা মেরি

বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা ভূমি। এদেশের আনাচে কানাচে কত যে সৌন্দর্য্য লুকিয়ে তা একমাত্র বিধাতাই জানেন। কারণ এখনো অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল রয়েছে যেখানে মানুষের পদচারণা নেই। নিভৃত অঞ্চলগুলোতে যদি যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করা যেতো তাহলে পর্যটন খাতে ব্যপক মুনাফা লাভের সম্ভাবনা ছিলো।

প্রতি বছরই কয়েকটি জায়গায় যাওয়ার সুযোগ হয় কিন্তু পরিপূর্ণ ভাবে দেখার সুযোগ হয় না। কারণ দূর্গম কিছু স্থানের কথা বললেই স্থানীয় লোকজন বলে, ওখানে আপনি যেতে পারবেন না। প্রচুর হাঁটতে হবে বা এত উপরে যে আপনি উঠতে পারবেন না, ইত্যাদি ইত্যাদি। এই না পারার, আর না দেখার কষ্টটা অত্যন্ত বেদনাময়।

কবে থেকে ভ্রমন শুরু হয় তা ঠিক মনে নেই। তবে ছোটবেলায় যেসব স্থানে গিয়েছিলাম তা সেভাবে উপলব্ধি করতে পারিনি বিধায় পুনরায় ঐসব স্থানে যেতে হয়। কিছু কিছু স্থানে তিন/চার বার গিয়েও মনে হয় দেখা শেষ হয়নি।

ইতিমধ্যে কক্সবাজার, হিমছড়ি, টেকনাফ, উখিয়া, সেন্টমার্টিন, ছেঁড়াদ্বীপ, মহেশখালী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, বান্দরবান, চন্দ্রনাথ পাহাড়,  খাগড়াছড়ি, সাজেক ভ্যালি, আলুটিলা, রাঙ্গামাটি, কাপ্তাই, সুন্দরবন, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, সিলেটের জাফলং, খাসিয়াপল্লী, বিছানাকান্দী, রাতারগুল, লালাখাল, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার, মাধবকুন্ড, কুষ্টিয়ার লালনশাহ মাজার, মুজিবনগর, শিলাইদহ রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ী, বগুড়া, পাহাড়পুর, নাটোরের উত্তরা গনভবন, মহাস্থানগড়, রাজশাহী, কুমিল্লার লালমাই, ময়নামতি, পটুয়াখালী, কুয়াকাটা, দিনাজপুরের স্বপ্নপুরী, কান্তজী মন্দির, রামসাগর, হিলি বন্দর, বাংলাবান্দা বা তেতুলিয়া, পঞ্চগড়, তিস্তা বেরেজ, রংপুর, নোয়াখালী আর চট্টগ্রাম তো নিজের এলাকা এবং ঢাকার আশেপাশে- পুবাইল,গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ, নরসিংদী,মুন্সিগঞ্জ,সাভার,ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল।

পাশাপাশি ভারতের কলকাতা,মুর্শিদাবাদ,শিলিগুড়ি, দার্জিলিং আর কাশ্মীর এপর্যন্তই আমার অভিজ্ঞতা।

নিজের দেখা কিছু স্থানের ভ্রমন অভিজ্ঞতা শেয়ার করার অভিপ্রায় নিয়ে শুরু এ লেখাটা। সবশেষ আমি আমার পরিবার সাথে এক বন্ধু পরিবার সহ সেন্টমার্টিন গিয়ে ছিলাম। তার বর্ণনাই আজ তুলে ধরছি।

যাত্রা হলো শুরু

এবার পরিকল্পনা ছিল নিঝুমদ্বীপ বা ভারতের শিলং যাবার। কিন্তু হঠাৎ শোনা গেল চলতি বছরের মার্চের পর সেন্টমার্টিনে রাত্রি যাপন নিশিদ্ধ হতে যাচ্ছে। এদিকে আগে কখনো সেন্টমার্টিনে রাতে থাকা হয়নি। সকালে গিয়ে বিকেলে চলে এসেছি। তাই এবার রাতযাপন করতে হবে- এই উদ্দেশ্য নিয়ে সবার সম্মতিতে আমাদের সেন্টমার্টিন যা প্রবাল দ্বীপ  (coral island নামে পরিচিত)যাত্রা।

দুই রাত তিন দিনের সফর আমাদের। ১৩ই ডিসেম্বর, ২০১৮।যাত্রা ঢাকা থেকে সন্ধ্যে সাড়ে সাতটায়। সেন্টমার্টিন নামক বাসে সরাসরি টেকনাফ। অভিযাত্রী আমরা নয় জন। একা একা ভ্রমন আনন্দময় হয়না তাই প্রতিবারই সাথে কেউ না কেউ থাকেই। যাই হোক আমরা যাত্রা বিরতিতে চৌদ্দগ্রামে রাতের খাবার সেরে বাসে উঠেই এক ঘুমে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে টেকনাফ পৌঁছে গেলাম।

প্রথম দিন-সেন্টমার্টিন

আমাদের আসা-যাওয়া আর থাকার ব্যবস্থা করেই আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম। তাই যতারীতি আমরা এসেই পেয়ে গেলাম আমাদের গাইড সী-পুলিশ মোঃআমীনকে। সে আমাদের জাহাজের টিকেট নিয়ে অপেক্ষায় ছিলো। আমাদের দেখা পেয়েই কিছু রোহিঙ্গা শিশুকে ডেকে আমাদের ল্যাগেজগুলো শীপে তুলে দিতে বলল।

নির্দিষ্ট জাহাজের এর ভিআইপি কেবিনে যারযার আসনে বসে পড়লাম। পর্য়টকদের ভিড় ছিল অন্য সময়ের চেয়ে বেশি। কারণ মার্চের আগেই সবার যাওয়ার তাড়া ছিল সেন্টমার্টিন।

আমাদের গাইড আমিনকে দেখতে না পেয়ে ফোন দিয়ে জানলাম, সে আমাদের জন্য সকালের নাস্তা নিয়ে জাহাজে এ উঠছে। কিন্ত জনসমুদ্র ঠেলে আমাদের কেবিনে পৌঁছাতে পারছেনা। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের কেবিনটা হয়ে গেলো ফার্মগেট আর মতিঝিলের লোকাল বাস। আমাদের ল্যাগেজ আর সোফার হাতলটাও বসার আসনে পরিনত হয়ে গেলো নিমিষেই।

কেউ গিটার হাতে, কেউ ব্লুটুথ সাউন্ড বক্স নিয়ে শুরু করে দিল ঐকতান। এরই মধ্যে হাতে হাতেই সেরে নিলাম আমাদের প্রাতঃরাশ। যদিও তখন প্রায় সকাল  দশটা। কড়া নিরাপত্তার মাঝে অতিরিক্ত যাত্রী না নিয়েই খুবই মন্থর গতিতে চলছে কালো জলের উপর দিয়ে আমাদের টাইটানিক। দুপুর বারোটায় আমরা পৌঁছে গেলাম আমাদের স্বপ্ন রাজ্য প্রবালদ্বীপ বা সেন্টমার্টিনে।

আনলো।দুপুরের আহার সারতে আমিন আমাদের নিয়ে গেলেন ইউরো বাংলা নামক একটা হোটেলে। হোটেলের সামনে তাজা মাছ, কাঁকড়া, আর লবস্টারের পশরা সাজিয়ে যে যা অর্ডার করছে সাথে সাথে তাই ভেজে পরিবেশ করা হলো আমাদেরকে । আমরা আহার সেরে এবার ভ্যানে উঠে সোজা আমাদের পূর্ব নির্ধারিত বাংলোয় পৌঁছে গেলাম।

তৈরি হয়ে আমরা ছুটে গেলাম পার্শ্ববর্তী সৈকতে। চারটা সাড়ে চারটার মধ্যে আমারদের সাগর পাড়ে হইচৈ আর ফটোসেশন শুরু হয়ে গেলো। শামুক ঝিনুকের সারিমাখা পথে হেঁটে চলা, আর সূর্যাস্ত দেখা। প্রবালের উপর বসে ছবি তোলা।

সন্ধ্যের পর সাগরের তীর ঘেষে মিষ্টি কিছু হাওয়ার আলিঙ্গন নিতে নিতে বহুদূর হেঁটে চলা। এভাবেই চলে যায় রাত এগারোটা অবদি। এরই মধ্যে সাগর সৈকতে বিকেলের চা পান সেরে কিংশুক সীবীচ রেস্টুরেন্টে রাতের খাবারের জন্য চিকেন বারবিকিউর আয়োজন চলছিলো। অবশেষে কালো প্রবালের রাজ্য ছেড়ে রাতের খাবার সেরে আমরা আমাদের বাংলোয় ফিরলাম। পরদিন ভোরের সূর্যোদয় দেখবো সবাই মিলে। রেডি থাকতে হবে ভোর সাড়ে পাঁচটায়।

# (চলবে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *