চট্টগ্রাম দেশে ভ্রমণ প্রত্নতত্ব

করলডেঙ্গা পাহাড়ে প্রকৃতির মিলনমেলায়

নয়ন চক্রবর্তী: ভ্রমণপিপাসুদের এক স্বর্গরাজ্য, যেখানে প্রকৃতি, ধর্ম আর মানুষ এক সুতোয় গাঁথা। প্রকৃতির লীলাভূমি করলডেঙ্গা পাহাড়, শান্ত মনোরম এই পরিবেশ ঘিরে আছে মন মাতানো আবহ।

করলডেঙ্গা মেধস মুণির আশ্রম সনাতন ধর্মালম্বীদের দুর্গা পূজার মূল উৎসভূমি হিসেবে পরিচিত। পৌরাণিক মতে এই পাহাড়ে দেবী দুর্গা মর্ত্যলোকে অবতীর্ণ হন। রাজা সুরথ আর সমাধি বৈশ্য মহর্ষি মার্কন্ডের কাছেই প্রথম দেবী মাহাত্ম্যম পাঠ নেন এবং দুর্গা পূজা করেন।

এই মেধস আশ্রমে পাহাড়ে উঠার পুরো পথই সিঁড়ি। সিঁড়ি শেষ হওয়ার কিছুটা আগেই আশ্রমের গেট। এই গেইট থেকে সোজা উঠলে মেধস মুনির মন্দিরের প্র্রবেশপথ। ভেতরে প্রবেশ করলেই বিরাট দুর্গা প্রতিমা, সুন্দর এর কারুকার্য শৈলী।

প্রবেশপথে ২০ সিঁড়ি পূর্বে ডান পাশে নেমে গেছে পুকুরের ঘাট। যা সীতা পুকুর নামে পরিচিত। এই সীতা পুকুরের যাওয়ার সিঁড়িও সুন্দর। এই পুকুরে সীতা স্নান করেছিলেন বলে কথিত আছে। এখানে সীতার পায়ের ছাপ সংরক্ষিত আছে। আর এই ডান পাশের পুকুরে যাওয়ার আগেই উপরে সিঁড়ির অগ্রভাগের পাশেই সমতল জায়গায় আছে। যার নামে আশ্রম সেই মেধস মুনি এবং সুরথ রাজা ও সমাধি বৈশ্যের মূর্তি মন্দিরে রাখা আছে। দেখে নিয়ে ছবি ও তুলে রাখতে পারেন।

এবার আসি মূল মন্দিরের বর্ণনায়। যেখানে দুর্গা মূর্তি আছে এই বড় মন্দিরে প্রার্থনা করার স্থানে বিশ্রাম নিতে পারবেন, চাইলে আশ্রমে বসার সিঁড়িতে বসে উপভোগ করতে পারবেন সুউচ্চ পাহাড় আর জনপদের সৌন্দর্য।

এই শীতে এসব দৃশ্য সত্যি অতুলনীয়। এখানে এই চন্ডী মন্দির ছাড়াও রয়েছে কামাক্ষা মন্দির, শিব মন্দির, কালী মন্দির, সীতা মন্দির, আর সীতার পুকুরের ঘাটে নেমে চাইলে গোসল ও সেরে নিতে পারেন।

এই আশ্রম সমতলের চেয়ে প্রায় ৫০০ ফুট উঁচুতে। অতএব এখান থেকে মনোমুগ্ধকর দৃশ্যে ধরা পড়বে চোখে, সারি সারি পাহাড়, পাহাড়ের মাঝে জুম চাষ, ঠান্ডা মেঘের হাওয়া সবমিলিয়ে এক অন্যরকম দিন।

বলে রাখা ভালো মেধস আশ্রম খুব নিরিবিলি জায়গা। পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর মাঝে মাঝে দেখা দিতে পারে বানরের দল। হঠাৎ পাশের পাহাড়ি বন থেকে উঁকি দিতে পারে খরগোশ। আর খাবারের খোঁজে আসা হাতির পালের দেখা মিলবে পাহাড়ের কিছুটা গভীরে গেলে।

গহীন পাহাড়ে যাওয়ার পথে পড়বে কামাক্ষা মন্দির। এই মন্দিরের সামনে যজ্ঞ করার কুণ্ড আছে। যজ্ঞের স্থানটা অনেক বড়, চাইলে প্রিয়জনের কিছু সুন্দর মূহুর্ত ক্যামেরার ল্যান্সে চোখ রেখে ফ্রেমবন্দি করে রাখতে পারেন। এরপর শিব মন্দির, এখান থেকে দূরের জঙ্গলে মাঝেমধ্যে হাতির দেখা পাওয়া যায়।

এসব ঘুরে আবার মূল মন্দিরের বাম পাশ দিয়ে নেমে গেছে সিঁড়ি, সুন্দর সিঁড়ি ধরে এগুলোই নীচে দেখা যাবে কালী মন্দির, কালী মন্দিরের পাশে লোহার বেষ্টনী। এই সীমানা বেষ্টনী থেকে আবাদী জমি দেখা যায়।

পুরো আশ্রম দেখলে মনে পড়বে আসলে এটি একটি আশ্রম যেখানে দেব-দেবী, প্রকৃতি, ঋষিগণ, মানুষ, পাখি ও প্রাণিকূল সব মিলিয়ে যেন এক কল্পনার রাজ্য। মন্দিরে শত রকমের ফুল-ফলের গাছ। মূল মন্দিরের ঠিক পিছনে দুর্লভ প্রকৃতির কিছু কাছিমও আছে। আর মন্দিরের পাশে একটা টিনের ছোট্ট চালার নিচে আছে দুটি চিত্রা হরিণ।

এই স্থানটি প্রকৃতির নিজ হাতে গড়া, শুধু ফটক আর মন্দিরের কারুশৈলী ছাড়া, আর এই নির্জন নিরিবিলি জায়গাটাতে আপনি চাইলে দুপুরের আহারও সেরে নিতে পারবেন।

তাহলে আপনার একটু তাড়াতাড়ি যেতে হবে, দুপুর ১২ টার মধ্যে মন্দিরের অফিস থেকে ৬০টাকা দিয়ে টোকেন নিয়ে নিতে হবে, কমপক্ষে চার পদের তরকারি নিয়ে নিরামিষ খাবারের সুযোগ পাবেন। যা অনেকের কাছে প্রিয়।

চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট বা কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়ে বোয়ালখালী উপজেলার কানুনগোপাড়া পর্যন্ত যেতে পারেন জনপ্রতি ৩০ টাকা ভাড়ায়। সেখান থেকে আবার অটোরিকশায় করে মন্দিরে প্রথম গেইট পর্যন্ত যাওয়া যায়, তাতে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ২০ টাকা। মেধস আশ্রম পর্যন্ত সরাসরি অটোরিকশা ভাড়া করে যেতে পারেন ১৩০-১৫০ টাকায়। #

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *