চট্টগ্রাম দেশে ভ্রমণ নগরে ভ্রমণ

ফয়’স লেকে প্রকৃতির যত আয়োজন

আবদুল্লাহ আল মামুন: স্বচ্ছ পানিতে পানকৌড়ির ডুবসাঁতার আর মাছরাঙা পাখির মাছ শিকার। লেকের পানিতে ঝুপ করে কিছু একটা ঝাপিয়ে পড়ার শব্দ। চোখ ফিরিয়ে দেখতে পাবেন হ্রদের জলে সাঁতার কেটে চলেছে গুইসাপ।

কোনো বন বা গ্রামীণ পরিবেশে নয়, এসবই দেখতে পাবেন নগরের মধ্যেই।

চট্টগ্রাম নগরের প্রাণকেন্দ্র জিইসি মোড় থেকে জাকির হোসেন সড়ক ধরে আড়াই কিলোমিটার গেলেই সড়কের পাশে ফয়’স লেকের তোরণ। সেখান থেকে চারশ মিটার ভেতরে এর মূল প্রবেশ পথ। শুরুতেই ফয়’স লেকের অ্যামিউজমেন্ট ওয়ার্ল্ড।

রয়েছে স্বচ্ছ জলে নৌ ভ্রমণের সুযোগ। নৌকায় চড়ে যখন ঘুরবেন পাহাড়ের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া লেকের জলে তখন হঠাৎ উড়ে আসবে ভুবন চিল।

ইট পাথরের নগরে প্রকৃতি নিশ্চিহ্ন হচ্ছে ক্রমশ। নগর সভ্যতা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গাছপালা আর পশুপাখি।

এখানেই পাবেন প্রকৃতির এক অপরূপ রূপের দেখা। হরেক প্রজাতির পাখির ওড়াওড়ি আর সবুজ প্রকৃতির নানা আয়োজন বারবার ডাকে ভ্রমনপিপাসুদের।

প্রকৃতির বর্ণিল আয়োজনের পাশাপাশি এখানে রয়েছে বেশ কিছু আধুনিক রাইড।

ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, পাইরেট শিপ, ফেরিস হুইল, অ্যাপলো ফ্লাইট, কফি কাপ, রেড ড্রাই স্লাইড, ইয়েলো ড্রাই স্লাইড, বাম্পার কার, বেবি ক্যারোজেল, বেবি ড্রাগন, সার্কাস ট্রেন, সার্কাস সুইং, বেবি বাম্পার কারের মতো রোমাঞ্চকর সব রাইড।

টিলার উপর আছে বনভোজন কেন্দ্র। সেখান থেকে আরেকটি টিলার উপরে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এখান থেকে পাখির চোখে দেখা মিলবে চট্টগ্রাম শহর। ছোট্ট সোনামনিরাও এখানে পরিচিত হতে পারবে প্রাণী জগতের সঙ্গে। পাহাড় চুড়ায় রয়েছে টিয়া পাখি, ঈগল পাখি, অজগর, চিতা বাঘ, ভালুকসহ নানা বন্যপ্রাণির ভাস্কর্য।

পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে নেমেই উঠা যাবে নৌকায়। পাহাড়ের বুক চিরে চলে গেছে জলের ধারা। ঝোপ ঝাড়ে ওৎপেতে থাকে বকের ঝাঁক। লেকের জলে দেখা মিলে নানা প্রজাতির মাছ। পাহাড়ের পাদদেশে ঢলো ঢলো সবুজের অরণ্য।

পাহাড়ের সংরক্ষিত বনে দেখা মিলে খরগোশসহ নানা বন্যপ্রাণী। লেকের শেষ প্রান্তে দেখা মিলবে রাজ প্রসাদসদৃশ রিসোর্ট।

এখানেই গড়ে তোলা হয়েছে পানির এক রোমাঞ্চকর রাজ্য। নাম সি ওয়ার্ল্ড। এই ওয়াটারপার্কে রয়েছে নানা রাইড। মেতে উঠা যায় পানির রাজ্যে। পাহাড় ও লেকের নির্জনতায় অবকাশ যাপনের জন্য ফয়’স লেকে আছে বেশ কিছু রিসোর্ট। লেক ও পাহাড়মূখী বাংলো ও রিসোর্ট মিলে ৪৮টি কক্ষ আছে এখানে। বারান্দায় বসে উপভোগ করা যাবে পাহাড়ের সৌন্দর্য।

চট্টগ্রামের পানি সমস্যার সমাধানে ১৯২৪ সালে প্রায় ৩৩৬ একর জায়গায় কৃত্রিম এ হ্রদ খনন করেছিল আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ সময় অযত্নে পড়ে থাকায় একসময় জৌলুস হারাতে বসে প্রাচীন এই লেকটি।

২০০৫ সালে এখানে গড়ে তোলা হয় আধুনিক অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও রিসোর্ট।

কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের উপ ব্যবস্থাপক (বিপণন) বিশ্বজিৎ ঘোষ জানান, ফয়’স লেকে পার্কে সাধারণ প্রবেশমূল্য ২৫০ টাকা। সব রাইডসহ প্রবেশ মূল্য ৩৫০ টাকা।

স্কুল-কলেজ থেকে আসা বনভোজন দলের জন্য প্রতিজনের প্রবেশ মূল্য ১৩০ টাকা, রাইডসহ ২৩০ টাকা। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর বনভোজন দলের জন্য  প্রতিজন ২৩০ টাকা, রাইডসহ ২৮০টাকা। তিন ফুটের চেয়ে কম উচ্চতার শিশুদের প্রবেশ মূল্য লাগে না। ফয়’স লেকের রিসোর্টের কক্ষ ভাড়া পাঁচহাজার থেকে ১০ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া বাংলোর কক্ষ ভাড়া পাঁচ হাজার ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।#

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *